মলিন পোশাক, উস্কখুস্ক চুল, তেল চিট চিটে মুখ দেখে বুঝতে কারোই অসুবিধা হচ্ছে না যে এরা সবাই পথশিশু। তবে অন্যদের উৎসুক দৃষ্টিতে ভ্রুক্ষেপ ছিল না শিশুদের। সবাই নিজের মনের মতো করে খাবার খাচ্ছে। গ্রিল চিকেনের সাথে সার্ভিস বয়কে কেউ পরোটা দিতে বলছে, কেউ বলছে পানি দিতে। কিছুটা বিরক্ত মুখে সার্ভিস বয়রা খাবার এগিয়ে দিচ্ছে। খাবার দিতে দেরি হওয়ায় শিশুদেরও কেউ কেউ চেঁচামেচি করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, ‘জেসকো কাবাব’ নামে রেস্তোরাঁর নিচে আরেকটি ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। তাতে একরাতের জন্য রেস্তোরাঁর নাম রাখা হয়েছে ‘পথশিশুদের মেহমানখানা’। খুলনা ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থার বাস্তবায়নে পথশিশুদের খাওয়ানোর অপেক্ষায় রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে একদল স্বেচ্ছাসেবক।
সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ জানান, রেস্তোরাঁটি পথশিশুদের মেহমানখানা হিসেবে ভাড়া নেয়া হয়েছে। শিশুরা নিজেদের পছন্দমতো যেটা খুশি খাবে। তাদের সাথে স্বাভাবিক গ্রাহকের মতোই ব্যবহার করতে হবে। শিশুরা একপাশে এবং বাইরে থেকে আসা গ্রাহকরা অন্যপাশে বসবে। শিশুরা যেন বুঝতে পারে তারা আলাদা কেউ না।
রেস্তোরাঁর ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ শিশুই বাইরে সাজানো চিকেন গ্রিল এবং পরোটা পছন্দ করেছে। তাদের খাবার সাজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে রেস্তোরাঁর সার্ভিস বয়রা। তাদের কেউ টিস্যু দিয়ে মুখ পরিষ্কার করছে, কেউ আয়নায় নিজেকে দেখে নিচ্ছে। বাকি শিশুরা নিজেদের মধ্যে খুনসুটিতে মেতে আছে। তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলো। চোখে-মুখে সবারই উচ্ছ্বাস থাকলেও মুখ দিয়ে তা বের হয়েছে খুব কমই।
খুলনা নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার আনন্দ স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. রিয়াজ বলে, ‘রাস্তা দিয়ে যেতে অনেক দিন এ রেস্টুরেন্ট দেখেছি। কোনোদিন ঢুকিনি। ভেতরটা সুন্দর। খাবারও ভালো।’
এখানে খেতে কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের উত্তর সে ভালো লাগছে বলে জানায়।
একই স্কুলের লাবণী আকতার টুকটুকি বলে, ‘বড়লোকদের রেস্টুরেন্টে আমাগো খাওয়াবে শুনে বুঝতে পারিনি এখানে নিয়ে আসবে। খুব ভালো লাগছে।’
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রেস্তোরাঁর অধিকাংশ টেবিল শিশুতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দেখা যায়, রেস্তোরাঁয় প্রবেশের পর মুহূর্তেই সব শিশুর চোখেমুখে বিস্ময় ফুটে ওঠে। বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ খুনসুটির পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় তারা। সবার সামনে পর্যাপ্ত খাবার, এরপরও খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি, হাসাহাসিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো রেস্তোরাঁ। তাই দেখে আনন্দে ভরে ওঠে আয়োজকদের মুখ।
খুলনা ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মৃধা জানান, শনিবার রাতে মোট ৫০ পথশিশু রেস্তোরাঁয় খাবার খেয়েছে। পুরো অর্থ সংস্থার পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। ‘ভালো খাবার খেতে পেরে ওদের চোখে-মুখে যে আনন্দ দেখেছি, তাতেই আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক হয়েছে।’